অধ্যায় 5
1
যীশু অনেক লোকের ভীড় দেখে একটা পাহাড়ের ওপর উঠে গেলেন৷ তিনি সেখানে বসলে শিষ্যরা তাঁর কাছে এলেন৷
2 এরপর তিনি তাঁদের কাছে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন, বললেন:
3 ‘ধন্য সেই লোকেরা যাঁরা আত্মায় নত-নম্র, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই৷
4 ধন্য সেইলোকেরা যাঁরা শোক করে, কারণ তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে সান্ত্বনা পাবে৷
5 বিনযী লোকেরা ধন্য৷ তারা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত দেশের অধিকার লাভ করবে৷’
6 ধন্য সেইলোকেরা, যাঁরা ন্যায়পরায়ণতার জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত কারণ তারা তৃপ্ত হবে৷
7 যাঁরা দয়াবান তারা ধন্য, কারণ তারা দয়া পাবে৷ যাদের অন্তর পরিশুদ্ধ তারা ধন্য, কারণ তারা ঈশ্বরের দর্শন পাবে৷
8 ধন্য তারা যাঁরা তাদের চিন্তায় পরিশুদ্ধ, কারণ তারা ঈশ্বরের সঙ্গে থাকবে৷
9 ধন্য তারা যাঁরা শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করে, কারণ তারা ঈশ্বরের সন্তানরূপে পরিচিত হবে৷
10 ঈশ্বরের পথে চলতে গিয়ে যাঁরা নির্য়াতন ভোগ করছে তারা ধন্য, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই হবে৷
11 তোমরা আমার অনুসারী হয়েছ বলে যখন লোকে তোমাদের অপমান ও নির্য়াতন করে আর তোমাদের নামে মিথ্যা কুত্সা রটায় তখন তোমরা ধন্য৷
12 তোমরা আনন্দ করো, খুশী হও, কারণ স্বর্গে তোমাদের জন্য মহাপুরস্কার সঞ্চিত আছে৷ তোমাদের আগে য়ে ভাববাদীরা ছিলেন লোকে তাঁদেরও এভাবেইনির্য়াতন করেছে৷
13 ‘তোমরা পৃথিবীর লবন, কিন্তু লবন যদি তার নিজের স্বাদ হারায় তবে কেমন করে তা আবার নোন্তা করা যাবে? তখন তা আর কোন কাজে লাগে না৷ তা কেবল বাইরে ফেলে দেওযা হয় আর লোকরা তা মাড়িয়ে যায়৷
14 ‘তোমরা জগতের আলো, পাহাড়ের ওপরে কোন শহর, যা কখনও লুকানো যায় না৷
15 বাতি জে্বলে কেউ পাত্রের নীচে রাখে না, তা বাতিদানের ওপরেইরাখে আর তা ঘরের সকলকে আলো দেয়৷
16 তেমনি তোমাদের আলোও লোকদের সামনে উজ্জ্বল হোক, য়েন তারা তোমাদের সত্কাজ দেখে তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন করে৷
17 ভেবো না য়ে আমি মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের শিক্ষা ধ্বংস করতে এসেছি৷ আমি তা ধ্বংস করতে আসিনি বরং তা পূর্ণ করতেইএসেছি৷
18 আমি তোমাদের সত্যি বলছি আকাশ ও পৃথিবীর লোপ না হওয়া পর্যন্ত বিধি-ব্যবস্থার বিন্দু বিসর্গও লোপ হবে না, বিধি-ব্যবস্থার সবই পূর্ণ হবে৷
19 তাই কেউ যদি এইসব আদেশের মধ্যে অতি সামান্য আদেশও অমান্য করে আর অপরকে তা করতে শিক্ষা দেয়, তবে সে স্বর্গরাজ্যে সব থেকে তুচ্ছ বলে গন্য হবে৷ কিন্তু যাঁরা বিধি-ব্যবস্থা পালন করে ও অপরকে তা পালন করতে শিক্ষা দেয়, তারা স্বর্গরাজ্যে মহান বলে গন্য হবে৷
20 আমি তোমাদের সত্যি বলছি ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীদের থেকে তোমাদের ধার্মিকতা যদি উন্নত মানের না হয় তবে তোমরা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না৷
21 ‘তোমরা শুনেছ, আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে বলা হয়েছিল, ‘নরহত্যা করো না;আর কেউ নরহত্যা করলে তাকে বিচারালয়ে তার জবাবদিহি করতে হবে৷
22 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যদি কেউ কোনো লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ হয় বিচারে তাকে তার জবাবদিহি করতে হবে৷ আর কেউ যদি কোন লোককে বলে, ‘ওরে মূর্খ’ (অর্থাত্ নির্বোধ) তবে তাকে ইহুদী মহাসভার সামনে তার জবাব দিতে হবে৷ কেউ যদি কাউকে বলে ‘তুমি পাষণ্ড,’ তবে তাকে নরকের আগুনেই তার জবাব দিতে হবে৷
23 ‘মন্দিরে যজ্ঞবেদীর সামনে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার সময় যদি তোমার মনে পড়ে য়ে তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোন অভিযোগ আছে,
24 তবে সেই নৈবেদ্য যজ্ঞবেদীর সামনে রেখে চলে যাও, প্রথমে গিয়ে তার সঙ্গে সে বিষয়ে মিটমাট করে নাও, পরে এসে তোমার নৈবেদ্য উত্সর্গ কোরো৷
25 ‘তোমার শত্রু যদি তোমার বিরুদ্ধে মামলা করতে চায় তবে আদালতে নিয়ে যাবার সময় পথেই তার সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিটমাট করে ফেল; তা না হলে সে তোমাকে বিচারকের হাতে তুলে দেবে, বিচারক তোমাকে রক্ষীর হাতে দেবে আর রক্ষীরা তোমাকে কারাগারে পাঠাবে৷
26 আমি তোমায় সত্যি বলছি, সেখান থেকে তুমি ছাড়া পাবে না, যতক্ষণ না তোমার দেনার শেষ পয়সাটা চুকিয়ে দাও৷
27 তোমরা শুনেছ, একথা বলা হয়েছে: ‘য়ৌনপাপ করো না৷’
28 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি কেউ যদি কোন স্ত্রীলোকের দিকে লালসাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তবে সে মনে মনে তার সঙ্গে য়ৌন পাপ করল৷
29 সেই রকম তোমার ডান চোখ যদি পাপ করার জন্য তোমায় প্ররোচিত করে তবে তা উপড়ে ফেলে দাও৷ সমস্ত দেহ নিয়ে নরকে যাওয়ার চেয়ে বরং তার একটা অংশ হারানো তোমার পক্ষে ভালো৷
30 যদি তোমার ডান হাত পাপ করতে প্ররোচিত করে, তবে তা কেটে ফেলে দাও৷ তোমার সমস্ত শরীর নরকে যাওয়ার চেয়ে বরং তার একটা অঙ্গ নষ্ট হওয়া তোমার পক্ষে ভালো৷
31 ‘আবার বলা হয়েছে, ‘কেউ যদি তার স্ত্রীকে ত্যাগ করতে চায়, তবে তাকে ত্যাগপত্র দিতে হবে৷
32 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, একমাত্র য়ৌনপাপের দোষ ছাড়া অন্য কোন কারণে কেউ যদি তার স্ত্রীকে ত্যাগ করে, তবে সে তাকে ব্যাভিচারিণী হবার পথে নামিয়ে দেয়৷ আর য়ে কেউ সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিয়ে করে সেও য়ৌনপাপ করে৷
33 ‘তোমরা একথা ও শুনেছ, আমাদের পিতৃপুরুষদের বলা হয়েছিল, ‘তোমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে য়ে সব প্রতিশ্রুতি কর তা ভেঙ্গো না, তোমাদের কথা মতো সে সবই পূর্ণ করো৷’
34 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমরা কোন শপথইকরো না৷ স্বর্গের নামে করো না, কারণ তা ঈশ্বরের সিংহাসন৷
35 পৃথিবীর নামে শপথ করো না, কারণ পৃথিবী ঈশ্বরের পাদপীঠ৷ জেরুশালেমের নামেও শপথ করো না, কারণ তা হল মহান রাজার নগরী৷
36 এমন কি তোমার মাথার দিব্যিও দিও না, কারণ তোমার মাথার একগাছা চুল সাদা কি কালো করার ক্ষমতা তোমার নেই ৷
37 তোমাদের কথার ‘হ্যাঁ’ য়েন ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ য়েন ‘না’ হয়, এছাড়া অন্য আর যা কিছু তা মন্দের কাছ থেকে আসে৷
38 ‘তোমরা শুনেছ, একথা বলা হয়েছে য়ে, ‘চোখের বদলে চোখ ও দাঁতের বদলে দাঁত৷’
39 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, দুষ্ট লোকদের প্রতিরোধ করো না, বরং কেউ যদি তোমার ডান গালে চড় মারে, তবে তার দিকে অপর গালটিও বাড়িয়ে দিও৷
40 কেউ যদি তোমার পাজামা নেবার জন্য আদালতে মামলা করতে চায়; তবে তাকে তোমার ধূতিটাও ছেড়ে দিও৷
41 যদি কেউ তার বোঝা নিয়ে তোমাকে এক মাইল পথ য়েতে বাধ্য করে, তার সঙ্গে দু মাইল য়েও৷
42 কেউ যদি তোমার কাছ থেকে কিছু চায়, তাকে তা দিও৷ তোমার কাছ থেকে কেউ ধার চাইলে তাকে তা দিতে অস্বীকার করো না৷
43 ‘তোমরা তাদের বলতে শুনেছ, ‘তোমার প্রতিবেশীকে ভালবাসো,শত্রুকে ঘৃণা করো৷
44 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের শত্রুদের ভালবাসো৷ যাঁরা তোমাদের প্রতি নির্য়াতন করে তাদের জন্য প্রার্থনা করো,
45 য়েন তোমরা স্বর্গের পিতার সন্তান হতে পার৷ তিনি তো ভাল মন্দ সকলের উপর সূর্য়্য়ালোক দেন, ধার্মিক অধার্মিক সকলের উপর বৃষ্টি দেন৷
46 আমি একথা বলছি, কারণ যাঁরা তোমাদের ভালবাসে তোমরা যদি কেবল তাদেরইভালবাস, তবে তোমরা কি পুরস্কার পাবে? কর আদায়কারীরাও কি তাইকরে না?
47 তোমরা যদি কেবল তোমাদের ভাইদেরইশুভেচ্ছা জানাও, তবে অন্যদের থেকে আর বেশী কি করলে? বিধর্মীরাও তো এমন করে থাকে৷
48 তাই তোমাদের স্বর্গের পিতা য়েমন সিদ্ধ তোমরাও তেমন সিদ্ধ হও৷